শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
ভারত-বাংলাদেশের চিকেন নেক ফেনিকে টার্গেটে ব্যর্থ হয়ে পাহাড়িদের মদত দিচ্ছে! লালমনিরহাটের সাবেক মেম্বার জয়নাল আবেদীন-এঁর ইন্তেকাল হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ! আদিতমারীতে জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার এর সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে র‍্যালি ও শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত কালীগঞ্জে জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার এর সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে ভুল কীটনাশক প্রয়োগে পুড়ে গেছে কৃষকের ধানক্ষেত! অধ্যক্ষ আবশ্যক এস বি এফ নার্সিং ইনিসটিটিউট, লালমনিরহাট লালমনিরহাটে কিন্ডার হিল্পস্ ওর্য়্যাক সংস্থার ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উপবৃত্তি, খাদ্য সামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে ৪শত ৭৩টি পূজা মন্ডবে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে!

বাপ্পী চলে গেলো

(সর্বহারার দল করা এক মানুষ আমার বন্ধু চলে গেলো)

তোমার অনেক আগেই চলে যাবার কথা,
একটা বিরক্তিকর পৃথিবীর প্রতি কি কোন
বিতৃষ্ণা ছিলো তোমার!
মাঝে মাঝে খুবই অবাক লাগতো,
একটা বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের
জন্য নিজের জীবনকে
কে দেয় বিলিয়ে এমন করে।
এরই নাম
কি উৎসর্গ করা?

এখনো এমন জীবন কাটাতে!
খড়ের ছাউনি দেয়া ঘরে, অনিন্দ ব্যতিক্রম।
অনেকের মনে খটকা লাগতো
তোমাকে দেখতে গেলে।
বই এর আলমারী ঘেরা ছোট্ট একটা ঘর
এর একপাশে একটা চৌকি,
চায়ের কাপ, পিরিচ
কিছু প্রয়োজনের থালাবাসন।

জীবনে এ এক আজব মানুষের জীবন ধারা দেখেছি।
প্রলেতারিয়েত?

দেখলাম চিন্তায় মননে।
হয়তো অনেকের সাথে তার মিলতো না
কোনকিছুই।
তাতে কি যায় আসে, কোন সমস্যা হলে
আল্লাহ্ করে শব্দ করে উঠতো।
এই মিয়া
তুমি কম্যুনিষ্ট, আল্লাহ্ বলো যে।

হাসতো, বলতো আমার “মা” এভাবেই বলতো তাই বলি।
হয়তো কাজ হতো হয়তো না।
এই প্রলেতারিয়েত, সময়ে অসময়ে আমার কাছে চলে আসতো।

ভাত খাইছেন গুরু?
এখনও তো আপনার খাবার সময় হয় নাই।
ভাত খাবো।
শিউলিকে বলতাম, শিউলি দুজনের খাবার দে টেবিলে।
হাত মুখ খুব ভালো করে ধুয়ে, একটা তোয়ালে চেয়ে নিয়ে, যত্নের সাথে মুখ হাত মুছে খেতে বসতো।
অত্যন্ত তৃপ্তির সাথে খাবার শেষ করতো।
তারপর হাত ধুয়ে এসে বসতো গল্প করতে।

পাহাড়ে বেড়াতে যেয়ে, কোন কারণে মাথায় আঘাত পেয়ে তিনদিন অজ্ঞান হয়ে বিনা চিকিৎসায় পড়েছিলো, তারপর ঢাকায় এনে নিউরোসার্জারী করে দীর্ঘ একবছর সুস্রষার পর জীবনে বেঁচে গেলেও
বাই টেমপোরাল হেমি এনোপিয়া হয়ে যায়।

ওর বউ শামীম অংকশাস্ত্রে একজন পিএইচডি ধারী
ইউনিসেফ এ চাকরী করতেন।
তিনি বাপ্পীর অসুস্থতায় যে নিবিড় সহযোগীতা করে বাপ্পীকে ভালো করে তুলেছিলেন, সে তুলনাহীন।
বাপ্পীর জীবনের সব কিছু তাঁর কাছে অপ্রয়োজনীয়
হলেও, আমি দেখেছি বাপ্পীর যে কোন চাওয়ার তিনি মূল্য দিতেন এবং কখনো কিছু চাওয়াকে অসন্মান করে কথা বলেন নি।
তাঁর এ উদারতার জন্য
আমি সব সময় তাঁকে বিশেষ ভাবে সুনজরে দেখতাম। একটা অদ্ভূত মানুষের সাথে তাঁর মৈত্রী,
যা সব সময় মনের মধ্যে অজস্র প্রশ্নের জন্মদিতো।

সে মাথায় আঘাতের পর চোখে কম দেখতো।
মাঝখানে দেখতো, দুপাশে দেখতে পেতো না।
এ এক কষ্টের জীবন। দিব্যি মেনে নিয়েছিলো। রাস্তার ধার ঘেঁষে চুপচাপ হেঁটে যেতো।
পরিচিত মানুষজনকে দেখলে, খুবই আন্তরিকভাবে কথা বলতো। তাঁর প্রচুর আত্মীয়স্বজন শহরে ছিলো।

কিন্তু সব আবদার আমার কাছে, আর হাবীব (রোটারিয়ান) এর কাছে।
১৯৯৬ এ পিজি হাসপাতালে ডিও করার সময় আজিজ সুপার মার্কেট এর প্রাকৃতজন”
দোকান ওর সাথে মাঝে মাঝে আড্ডা দিতে যেয়ে অনেক কথা হতো।
সমাজ বিপ্লবের পাঠ নেয়া এই সৈনিকের কাছে অনেক কথার মাঝে, তাঁর গোপন পলাতক জীবনের কথা অনেক সময় জানতে চাইলে, সে সব সময় বুদ্ধি করে এড়িয়ে যেতো।

একবার মেসবাহ্ কামাল “আন্দামানের পাঁচ বছর” রবীন সমাজদারের/ বরিশাল বাড়ী এক বই ছাপানোর প্রকাশক খুজছিলেন।
এই বইটা ছাপানোর জন্য টাকা দিয়েছিলাম বাপীর অনুরোধে। বই গুলো বাংলাদেশে চললো না। কিন্তু কলকাতা বই মেলায়, আন্দামানের হেডলাইন পেয়ে, সব বই “হট কেক” এর মতো নিঃশেষ হয়ে গেলো ক’দিনের মধ্যে।

বাপ্পী হাসছিলো। গুরু সুপার সাকসেস। কলকাতা বই মেলায় সব বই খেয়ে ফেলেছে। “প্রাকৃতজন” শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেলো। বাপ্পী লালমনিরহাট এসে একটা কৃষি ফার্ম করার জন্য বেশ কিছু জমি কিনলো, মুরগী চাষ, মাছ চাষ, লিচু বাগান।
সারাদিন বসে বই পড়া, ব্যবসায় খেয়াল নেই। সব ফ্লপ। বই পড়ার যে অদ্ভূত নেশা।
সীমাহীন নেশা। ও এতো উচ্চমার্গের বই পড়তো, আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও, ওর মধ্যে যে জ্ঞানের দীপ্তি ছড়াচ্ছিলো, তা একদিন কোথাও কোন কাজে লাগতো। কিন্তু বাপ্পী চলে গেলো।
৫৩-৫৪ বছর তো চলে যাবার বয়স নয়।

তবু “এন জেড”
নুরুজ্জামান খন্দকার এর পুত্র
বাপ্পী খন্দকার যে মহাজীবনের পথে যাত্রা করলো, তা তাঁর সমগ্র রাজনৈতিক চেতনার সমস্ত অজানা কাহিনীকে অপ্রকাশিত রেখেই চলে গেলো।

আমি তাঁকে সবার কাছে আমার বন্ধু বলতাম।
একজন বিপ্লবী মানুষের ঠিকানা নিয়ে অনেক কথা লিখবার থাকলেও ১৯৯৬-২০২২,
এই ছাব্বিশ বছরের আরো কিছু কথা হয়তো কখনো লিখবো, যদি আমি সময় পাই। বাপ্পীকে ওর মায়ের কবরে কবর দেয়া হয়েছে।
ভালো থেকো বাপ্পী মায়ের কোলে।
সন্ধ্যা তারা উঠবে আকাশে জ্বলবে নিভেযাবে,
তুমি বেঁচে রবে নিভৃতে, যেমন নিভৃতচারী এক ব্যর্থ বিপ্লবের চিহ্ন নিয়ে চলে গেলে।
কেউ কি মনে রাখবে তোমাকে, “প্রলেতারিয়েত “।
জাকি/ নিউজার্সি/ আমেরিকা।
৩১/১২/২০২২

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone